সিজদাহ্ আয়াতের ফজিলত বর্ণনা করেছেন মাওলানা আব্দুল গনি সাহেব
সিজদাহ্ আয়াতের ফজিলত:
فَائِدَةٌ مُهمَّةٌ لِدَفْعِ كُلِّ مُهِمَّةٍ
قَالَ الاِمَامُ النّسفي فِي الْكَافِي : مَنْ قَرَأَ أَية السَّجَدَةِ كُلَّهَا فِي مَجْلِسٍ وَاحِدٍ وَسَجَدَ لِكُلِّ مِنْهَا كَفَاهُ اللهُ مَاآهمَتَهُ
মাওলানা আব্দুল গনি সাহেব, খতিব কাদিপুর জামে মসজিদ, বিরশ্রী, জকিগঞ্জ, সিলেটযে কোন পেরেশানী দূর করার মহোত্তম উপায়:
ইমাম নাসাফী তাঁর আল-কাফী নামক গ্রন্থে লিখেন, যে ব্যক্তি একই জায়গায় বসে সমস্ত সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে, এবং প্রত্যেক আয়াতের সিজদা আদায় করে। আল্লাহ তা'আলার তার সকল পেরেশানী দূর করার দায়িত্ব নিয়ে নেন।
আল কোরআনে সিজদার আয়াত সমূহ...
পবিত্র কোরআনুল কারিমে এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলো তিলাওয়াত করার পর তিলাওয়াতকারীর জন্য সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। এই আয়াতগুলোকে "সিজদার আয়াত" বলা হয়। পবিত্র কোরআনে মোট ১৪টি সিজদার আয়াত রয়েছে। প্রতিটি আয়াত নির্দিষ্ট সূরার অংশ এবং এগুলোর আয়াত নম্বরসহ অর্থও রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো।
(১) إِنَّ الَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُون
অর্থ : নিশ্চয়ই যারা তোমার প্রভুর সান্নিধ্যে থাকে, তারা তার ইবাদতে অহঙ্কার করে না। তারা সর্বদা তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তাকেই সিজদা করে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৬)
(২) وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ
অর্থ : আর আসমানসমূহ ও জমিনের সবকিছুই আল্লাহর জন্য অনুগত্য ও বাধ্য হয়ে সকাল সন্ধ্যায় সিজদা করে এবং তাদের ছায়াগুলোও। (সূরা রাদ, আয়াত নং ১৫)।
(৩) وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِنْ دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
অর্থ : আকাশ ও জমিনের সব প্রাণী এবং ফেরেশতারা আল্লাহকেই সিজদা করে। তারা কোনোভাবেই অহঙ্কার করে না। তারা নিজেদের উপরস্থ রবকে ভয় করে এবং যে আদেশ তাদের দেওয়া হয়, তা বিনীতভাবে পালন করে। (সূরা নাহল, আয়াত: ৫০)
(৪) قُلْ آمِنُوا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا
অর্থ : তাদের বলে দাও, তোমরা চাইলে এতে ঈমান আন বা না-ই আন। তবে যাদের আগে থেকেই জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, তাদের সামনে এই কোরআন তেলাওয়াত করা হলে, তারা সম্মানের সঙ্গে থুতনি ফেলে সিজদায় পড়ে যায়। তারা বলে, **“আমাদের প্রতিপালক পবিত্র ও মহিমান্বিত! আমাদের রবের প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হয়।”** তারা কান্নারত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়ে, আর এটি তাদের অন্তরের বিনয় ও নম্রতা আরও বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১০৭-১০৯)
(৫) أُولَئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ مِنْ ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِنْ ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا
অর্থ : এরাই আদম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্য থেকে সেই নবীগণ, যাদের প্রতি আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। তারা এমন নবী, যাদের আমি নুহ (আ.)-এর সঙ্গে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম এবং যারা ইবরাহিম ও ইসমাইলের বংশধর। এদেরকেই আমি পথ দেখিয়েছি এবং মনোনীত করেছি। যখন তাদের কাছে পরম দয়ালু আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তারা কান্নারত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৮)
(৬) أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ
অর্থ : তুমি কি দেখনি যে, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর জন্য সিজদা করে? সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়, বৃক্ষ, জীবজন্তু—এমনকি অনেক মানুষও। তবে কিছু মানুষ এমন আছে, যাদের ওপর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন, তাকে সম্মানিত করার মতো কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা-ই ঘটান। (সূরা হজ, আয়াত: ১৮)
(৭) وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اسْجُدُوا لِلرَّحْمَنِ قَالُوا وَمَا الرَّحْمَنُ أَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُورًا
অর্থ : আর যখন তাদের বলা হয়, “তোমরা রহমানকে সিজদা করো,” তখন তারা জিজ্ঞাসা করে, “রহমান কী? তুমি আমাদের আদেশ করলেই কি আমরা সিজদা করবো?” তাদের এই উত্তর কেবল তাদের গোঁড়ামি ও বিরতিই আরও বাড়িয়ে দেয়। (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৬০)
(৮) أَلَّا يَسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي يُخْرِجُ الْخَبْءَ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُونَ وَمَا تُعْلِنُونَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
অর্থ : (সে তাদেরকে বাধা দেয়), যাতে তারা সিজদা না করে আল্লাহর প্রতি, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের অদৃশ্য বিষয়াবলি উন্মোচন করেন এবং যিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন।” (সূরা নামল, আয়াত: ২৫-২৬)
(৯) إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
অর্থ : আমার আয়াতসমূহে কেবল তারাই ঈমান আনে, যারা এগুলোর মাধ্যমে উপদেশ পেলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠ করে। আর তারা কখনো অহঙ্কার করে না।” (সূরা সিজদা, আয়াত: ১৫)
(১০) قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَى نِعَاجِهِ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَا هُمْ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ
অর্থ : দাউদ (আ.) বললেন, ‘তোমার দুম্বাকে তার ভেড়ির পালের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি করেছে সে তোমার প্রতি বিষণ অন্যায় করছে। আসলে শরিকদের অধিকাংশই একে অন্যের ওপর জুলুম করে, তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা এর ব্যতিক্রম। আর এরা সংখ্যায় খুবই অল্প।’ এরপর দাউদ (আ.) বুঝতে পারলেন, আমরা তাকে পরীক্ষা করেছি। তখন তিনি তার রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর অভিমুখী হলেন।” (সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৪-২৫)
(১১) وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ فَإِنِ اسْتَكْبَرُوا فَالَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ يُسَبِّحُونَ لَهُ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَهُمْ لَا يَسْأَمُونَ
অর্থ : আর তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, চন্দ্র ও সূর্য। তোমরা সূর্য বা চন্দ্রের সিজদা করবে না, বরং তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে চাও। আর যদি তারা অহঙ্কার করে, তবে তারা জানুক, যারা তোমার রবের কাছে রয়েছে তারা দিনরাত তাঁরই তাসবিহ পাঠ করে এবং তারা ক্লান্তি অনুভব করে না।” (সূরা হা-মীম সিজদা, আয়াত: ৩৭-৩৮)
(১২) فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا
অর্থ : সুতরাং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা কর এবং ইবাদত করো। (সূরা নাজম, আয়াত নং ৬২)।
(১৩) وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ
অর্থ : আর যখন তাদের কাছে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা সিজদা করে না। (সূরা ইনশিকাক আয়াত নং ২১)।
(১৪) كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
অর্থ : কখনও নয়, তুমি আর আনুগত্য করবে না। বরং তুমি (আল্লাহকেই) সিজদা করো এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করো।” (সূরা আলাক, আয়াত: ১৯)
এই চৌদ্দটি আয়াত যখন তেলাওয়াত করা হবে তখনই সিজদা করতে হবে অথবা কেউ পরে দিতে চাইলেও পারবে। তবে পড়নে ওয়ালা এবং শুননে ওয়ালা উভয়ের উপর সিজদাহ ওয়াজিব
0 Comments
আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ